মোঃ আনজারুল হক;পীরগঞ্জ,রংপুর থেকে
পীরগঞ্জে লম্পট দুলাভাইয়ের কারণে স্বামীর সংসার ও বাবার বাড়ি দু’য়েই হারাতে বসেছে গৃহবধু মমেনা (১৮)। মমেনার স্বামী আসাদুল ইসলাম সমাজপতিদের নিকট বিচার প্রার্থণা করে ঘটনার প্রায় ১ মাসেও বিচার মেলেনি। বরং অভিযুক্ত দুলাভাইয়ের বাড়িতেই গৃহবধু মমেনাকে জিম্মায় রেখেছে সমাজপতিরা। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে।
জানা গেছে, একই ইউনিয়নের চক কৃষ্ণপুর গ্রামের রিমি হাসদার কন্যা মমেনা’র সঙ্গে পাশ্ববর্তী হাজিপুর গ্রামের নয়া মিয়ার পুত্র আসাদুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমকে চির অমর করে রাখতে দেড় বছর পূর্বে আসাদুল ও মমেনা পালিয়ে গিয়ে রংপুর নোটারী পাবলিকে এফিডেফিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। আসাদুল শ্রমজীবি হলেও বিয়ের পর দু’জনের সংসার ভালই চলছিল। আসাদুল অধিকাংশ সময় কাজের সন্ধানে এলাকার বাহিরে থাকতো। বর্তমানে তার স্ত্রী মমেনা বেগম ৩ মাসের অন্তসত্তা। এদিকে মমেনার দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আপন দুলাভাই একই গ্রামের নয়া মিয়ার পুত্র আব্দুল সাত্তারের। সাত্তার প্রায়ই শালিকা-দুলাভাইয়ের সম্পর্ককে পুঁজি করে তার বাড়িতে যেত এবং নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিত। এরই সূত্র ধরে গত ১ ফেব্রুয়ারী রাতে মমেনার থাকা ঘরের জানালায় দুলাভাই পরিচয় দিয়ে তাকে ডেকে তোলে এবং ফুসলিয়ে বাড়ি সংলগ্ন বাঁশ বাগানে নিয়ে গিয়ে বলপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তির শব্দে মমেনার শ্বাশুড়ী ওজুবা বেগম ও সতীন পুত্র রাকিবুল ইসলাম এগিয়ে আসলে লম্পট দুলাভাই সাত্তার পালিয়ে যায়। এ সময় আসাদুল দিনাজপুরের বিরামপুর এলাকায় অবস্থান করছিল। ঘটনার পর থেকে শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে স্বামীর বাড়িতে স্থান হয়নি মমেনা বেগমের। মমেনা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি আদিবাসী কন্যা। প্রেম করে বিয়ে এবং মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছি। তাই মা-বাবার সমাজ আমাকে কোনভাবেই আর মেনে নিবেনা। আমার বড় বোন মেরিনাও প্রেম করে সাত্তারকে বিয়ে করে সংসার করছে। কিন্তু সয়তান দুলাভাই সাত্তারের কারণে আজ দু’কুলেই হারাতে বসেছি।
এদিকে ঘটনার একদিন পর সংবাদ পেয়ে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শফিউর রহমান (বর্তমান অন্যত্রে বদলী) ঘটনাস্থলে গেলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্তার হোসেনসহ গ্রাম্য মাতব্বররা সামাজিকভাবে বিচারের আশ্বাস দেন এবং গৃহবধু মমেনাকে জিম্মায় নেন। কিন্তু সমাজপতিরা নানা অজুহাতে দীর্ঘ ১ মাসেও বিচার তো করেইনি বরং উল্টো অভিযুক্ত দুলাভাই সাত্তারের বাড়িতেই মমেনাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বাহিরের কোন লোকের সঙ্গে যেন মমেনা কথা বলতে না পারে, সে জন্য অধিকাংশ সময় তাকে ঘরে আটকে রাখা হতো। মমেনার স্বামী আসাদুল কর্মস্থল থেকে ঘটনার দু’দিন পর গ্রামে আসে এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাইলে দুলাভাই সাত্তার দেখা করতে দেয়নি। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করতে দেয়নি। মমেনার স্বামী আসাদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, বিচারের জন্য মেম্বার ও সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্ত তারা বিচার করেনি। সাত্তার সমাজপতিদের নিকট আত্মীয় হেতু সমাজপতিরা শালিস করতে গড়িমশি করছে। তবে বিচার না হওয়া পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ঘরে তুলবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন অসহায় আসাদুল ইসলাম।